ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়
ডেঙ্গু রোগ অন্যান্য রোগ গুলোর মতই একটি রোগ। দিন দিন ডেঙ্গু রোগের প্রভাব বেড়েই চলেছে।মানব জীবনে অন্যান্য রোগ থাকলেও ডেঙ্গু একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।
এই পোস্টে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তাই পোস্টটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়
- ডেঙ্গু রোগ কি
- ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
- কোথা থেকে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে
- কোন বয়সের লোকের ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বেশি
- আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন
- ডেঙ্গু বাহিত জ্বর কতদিন স্থায়ী হয়
- ডেঙ্গু হলে যেসব খাবারগুলো খাওয়া উচিত
- ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
- ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য কি কি করণীয়
- আমাদের শেষ কথা
ডেঙ্গু রোগ কি
ডেঙ্গু একপ্রকার ভাইরাস বাহিত রোগ। অন্যান্য ভাইরাস রোগ গুলোর মতই এটি একপ্রকার ভাইরাস বাহিত রোগ। এই ডেঙ্গু নামক ভাইরাস রোগটি মানব জীবনে মূলত মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এক প্রকার এডিস মশা এই ডেঙ্গু ভাইরাসটি বহন করে থাকে। এবং একপর্যায়ে এই ভাইরাস যুক্ত মশাটির কামরে ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
এই রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি বড় লক্ষণ হল ঘন ঘন জ্বর আসা। এবং এই জ্বর এক পর্যায়ে অতিরিক্ত মাত্রা অতিক্রম করে ১০০-১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাছাড়াও এই ডেঙ্গু রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে।যেসব লক্ষণগুলো হলে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার ডেঙ্গু নামক ভাইরাস রোগ হয়েছে কিনা। আসুন জেনে নিই ডেঙ্গু রোগের আরো কয়েকটি বিশেষ লক্ষণ।
- থেমে থেমে জ্বর আসা যাওয়া
- তীব্র মাথাব্যথা হওয়া
- চোখে ঝাপসা দেখা
- গলা ও কানের নিচে ব্যথা হওয়া
- খাবার প্রতি রুচি কমে যাওয়া
- খাবার পর বমি বমি ভাব হওয়া
- শরীরের শক্তি কমে যাওয়া
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে ধরে নেওয়া যায় যে ডেঙ্গু নামক রোগটি একজন ব্যক্তির দেহে আক্রমণ করেছে। প্রথম অবস্থায় জ্বর কিংবা উপরোক্ত লক্ষণগুলো কমে গেলেও পুরোপুরিভাবে তা নিঃস্ব হয়ে যায় না। পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দুর্বল করতে থাকে এই ভয়ানক ভাইরাসটি। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে শীঘ্রই এর ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
কোথা থেকে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে
বর্ষাকালে থেমে থেমে বৃষ্টি হাওয়াই বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে। আর সেই জমে থাকা পানির ওপর এই এডিস নামক মশা ডিম পেরে বংশবিস্তার করে। তাই বর্ষাকালে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। তাছাড়া এখন সারাবছর জুড়ে এই ডেঙ্গুর রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
তাই আমাদের উচিত আমাদের বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা বিভিন্ন পানির পাত্র যেখানে পানি জমে থাকার সম্ভাবনা থাকে সেইসব পাত্র ভেঙ্গে ফেলা বা সরিয়ে ফেলা। তাছাড়া বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এই ডেঙ্গু নামক ভয়ানক ভাইরাস রোগটি থেকে কিছুটা প্রস্তুতি পাওয়া যায়।
কোন বয়সের লোকের ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বেশি
ডেঙ্গু রোগ সাধারণত একজন শিশু থেকে শুরু করে একজন বয়স্ক ব্যক্তির এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি নির্দিষ্ট কোন বয়সের ব্যক্তিকে আক্রমণ করে থাকে বিষয়টা কিন্তু সেরকম না। তাই এটি সকল শ্রেণীর ব্যক্তির শরীরে দেখা দিতে পারে।
আপনার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জড়িত রোগ। এ রোগটি আপনাকে গ্রাস করেছে কিনা তা আপনি আপনার দেহের লক্ষণ দেখলেই বুঝতে পারবেন। অধিকাংশ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েও বোঝা যায় না। সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগটি মারাত্মক রুপ ধারণ করে থাকে। তাই আপনার দেহের কোন অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করলে অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ নেবেন। যাতে করে এর সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু বাহিত জ্বর কতদিন স্থায়ী হয়
যেহেতু রোগটি অধিকাংশ সময়ে ডেঙ্গু জ্বর নামেও পরিচিত। কেননা এ রোগের প্রধান যে মাধ্যমগুলো হল তারমধ্যে জ্বর একটি অন্যতম লক্ষণ। অন্যান্য রোগের সময় এতটা জ্বর অনুভব করা যায় না যতটা ডেঙ্গু রোগ হলে অনুভব করা যায়। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা ১০০ থেকে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই জ্বর টি সাধারণত ৩-৭পর্যন্ত কমবেশি হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু হলে যেসব খাবারগুলো খাওয়া উচিত
কোন ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথমত তার শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অতিরিক্ত হারে পানি পান করতে হবে, হোক সেটা ডাবের পানি কিংবা বিভিন্ন প্রকার শরবত। এছাড়া ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পেঁপে পাতার জুস খাওয়া প্রয়োজন। এই পেঁপে পাতার জুস প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
এরপর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যে ফলটি বেশি খাওয়া প্রয়োজন তাহলো ডালিম ও কমলালেবু। কমলালেবু তে আছে ভিটামিন 'সি' যা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ হতে সহযোগিতা করে।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যেহেতু খুব সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে এজন্য ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়ানো খুবই প্রয়োজন। মাছ, মাংস, চর্বি বিহীন লাল মাংস,ডিম, দুধ, ইত্যাদি খাদ্যে প্রোটিন বেশি থাকে। যা একজন ডেঙ্গু রোগীকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে সহযোগিতা করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার সবজি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কে খাওয়াতে হবে। কেননা সবজিতে থাকে ভিটামিন 'কে' জাতীয় খাবার। যা একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
ডেঙ্গু রোগটি যদি আপনার প্রথমবারের মত হয়ে থাকে এবং আপনার শরীরের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক না হয় তাহলে আপনি ঘরে বসেই এর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করবেন। তাছাড়া অন্য কোন ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হবে না। আপনার দেহের তাপমাত্রা অনুযায়ী আপনি প্যারাসিটামল খেতে থাকবেন।
দ্বিতীয়ত যে খাবারটি আপনি বেশি খাবেন সেটি হল পানি। কারণ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে একেবারেই পানি শূন্য হয়ে পড়ে। তাই আপনি যদি একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি হন তাহলে আপনি প্রতিনিয়ত ২.৫-৩ লিটার পানি পান করবেন। সাথে তরল জাতীয় সকল প্রকার শরবত অথবা পানির সাথে লেবুর শরবত মিশিয়ে পান করবেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে প্রথম পর্যায়ে আপনি ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা ঘরে বসেই করতে পারবেন। এছাড়া আপনার দেহের তাপমাত্রা যদি দিন দিন বৃদ্ধি পাই সে ক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য কি কি করণীয়
যে সব এলাকায় ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বেশি সেইসব এলাকায় এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে যাতে করে ওইসব মশার আক্রমণ থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়। এবং এলাকার খাল-বিল, পুকুর, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে করে কোন প্রকার ডেঙ্গু মশার সৃষ্টি না হতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
ডেঙ্গু রোগের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে এবং এই ডেঙ্গু রোগের তেমন কোনো বিশেষ ধরনের ওষুধ নেই। তাই আপনার যদি এই ডেঙ্গু নামক ভয়ানক ভাইরাসটি আক্রমণ করে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি তাড়াতাড়ি নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নিন । অন্যথায় এ রোগ কে অবহেলা করে দিন কাটাবেন না। তা না হলে এর পরিনাম খুব ভয়াবহ হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রথমত যে দিকগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে সেটি হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। তারপরও এর লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
গুড লাইক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url