ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার ৭টি উপকারিতা
ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পোস্ট। আপনারা যারা ফজরের নামাজ আদায় করেন তারা অনেকেই জানেননা এটি আদায় করার সঠিক সময় কোনটি। আবার অনেকেই অনেক ভাবে জেনে থাকতে পারেন।
এই পোস্টে আমরা আজকে আপনাকে ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দেব। সাথে ফজরের নামাজ পড়ার বিভিন্ন ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব। অতএব পোস্টটি ভালোভাবে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার ৭টি উপকারিতা।
- ফজরের নামাজ জামাতে কেন পড়ব
- ফজরের নামাজ জামাতে আদায়ের ফজিলত
- কখন ফজরের নামাজ পড়ার শেষ ওয়াক্ত
- কোথায় ফজরের সালাত আদায় করা উচিত
- জামাতে নামাজ পড়ার উপকারিতা
- ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার জন্য করণীয়
- ফজরের নামাজ সময় মত পড়তে না পারলে করণীয় কি
- ফজরের নামাজ আদায় করলে যেসব উপকার হয়
- ফজরের সালাত আদায় না করতে পারলে সারাদিন যা হয়
- আমাদের শেষ কথা
ফজরের নামাজ জামাতে কেন পড়ব
ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার যে ফজিলত তা একজন মুসলিম ব্যক্তি যদি জানতো সে কখনো ফজরের নামাজ জামাত ছাড়া আদায় করত না। কেননা এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে একাকী নামাজ আদায় করার চাইতে জামাতে নামাজ আদায় করলে সত্তর গুন বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। তাই একজন মুসলিম হিসেবে প্রত্যেকের উচিত ফজরের নামাজ সহ বাকি ৪ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা।
ফজরের নামাজ জামাতে আদায়ের ফজিলত
ফজরের নামাজ জামাতে আদায়ের ফজিলত অনেক। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে আপনাদেরকে অব্যাহত করব। মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার ওপরে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আর এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ হলো ফজর,জোহর, আসর,মাগরিব এবং এশা। অন্যান্য ৪ ওয়াক্ত নামাজ এর চাইতে ফজরের সালাত এর ফজিলত একটু বেশি।
কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন যে ফজরের সালাত যে ব্যক্তি জামাতের সহিত আদায় করবে আমি মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজ হাতে পুরস্কৃত করব। একজন মুসলিম ব্যক্তির কাছে এর চাইতে আর সুসংবাদ কি হতে পারে। তাই আপনি যদি একজন মুসলিম হিসাবে দাবি করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ফজরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করতে হবে। অন্যথায় আপনি মহান আল্লাহ্ নিজ হাতে দেওয়া সেই পুরস্কার হতে বঞ্চিত হবেন।
অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের সালাত আদায়ের জন্য অনেকগুলো নির্দেশ দিয়েছেন। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে একজন সাহাবী জিজ্ঞাসা করছেন ফজরের সালাত আদায় ব্যাপারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতে আদায়ের পর ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করল সে যেন পুরো রাত্রি নামাজ আদায়ের সাওয়াব পেল।
কখন ফজরের নামাজ পড়ার শেষ ওয়াক্ত
উপরে আমরা ফজরের নামাজের কয়েকটি বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানব এই ফজরের নামাজ এর শেষ ওয়াক্ত কখন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ফজরের সালাত বিভিন্ন সময় আদায় করে থাকে।তাই অনেকেই ফজরের নামাজ এর শেষ ওয়াক্ত সম্পর্কে অবাহত না।
মূলত সূর্য ওঠার পর ফজরের সালাত আদায় করা ঠিক না। এই বিষয়টা নিয়ে অনেকেই অনেকভাবে মতভাব প্রকাশ করে থাকে। কেউ বলে সূর্য ওঠার পর, আবার কেউ বলে সূর্যের হলুদ বর্ণের রংগের আকৃতি হলেই ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। তবে অধিকাংশ হাদিসেই বর্ণিত আছে যে সূর্য উঠার পর ফজরের নামাজের ওয়াক্ত পুরোপুরি ভাবে শেষ হয়ে যায়।
কোথায় ফজরের সালাত আদায় করা উচিত
আমরা আজকের এই পোস্টের প্রথমেই আলোচনা করেছি যে একাকী নামাজ আদায় করার চাইতে জামাতে নামাজ আদায় করলে সত্তর গুন বেশি সব পাওয়া যায়। অতএব শুধু যে ফজরের নামাজ জামাতে পড়তে হবে বিষয়টা কিন্তু সেরকম না। ফজর বাদে আরো বাকি ৪ ওয়াক্ত নামাজ আপনাকে জামাতের সহিত আদায় করতে হবে। তাই আমরা সকলেই চেষ্টা করব পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সহিত আদায় করতে।
এছাড়া কিছু লক্ষণীয় বিষয় আছে যে আপনি এমন এক পরিবেশের সাথে মিশে আছেন সেখান থেকে বেরিয়ে জামাতে সালাত আদায় করা আপনার জন্য কষ্টকর। সে ক্ষেত্রে আপনি একাকী সালাত আদায় করবেন। আপনি যদি মাঠে অবস্থান করেন কিংবা এমন কোন জায়গাতে আছেন যেখানে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ নেই সেক্ষেত্রে আপনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় একাকী সালাত আদায় করতে পারবেন।
জামাতে নামাজ পড়ার উপকারিতা
জামাতে নামাজ পড়ার বেশ কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। তারমধ্যে একটি হলো জামাতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে একজন মুসল্লীর অপর মুসল্লির সাথে দৈনিক পাঁচবার দেখা হয়। এতে করে একজন আরেকজনের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হয়। গড়ে ওঠে একটি সুন্দর সমাজ।
তাছাড়া একজন মুসল্লী যখন কোন বিপদ অথবা অসুস্থতার কারণে জামাতে উপস্থিত না হতে পারলে তাৎক্ষণিক অন্য মুসল্লিরা তার অনুপস্থিত সহজেই বুঝতে পারি। এতে করে যে উপকারটি হয় সেটি হলো সেই ব্যক্তির সমস্যা অধিকাংশে সমাধান হয়ে যায়।
ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার জন্য করণীয়
অন্যান্য নামাজ জামাতে পড়তে অতটা কষ্ট হয় না যতটা কষ্ট হয় ফজরের নামাজ পড়ার সময়। তবে যারা নিয়মিত ফজরের সালাত আদায় করে তাদের জন্য এটা কোন বিষয় না। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হতে পারে কিন্তু নিয়মিত নামাজ আদায় করলে এ সমস্যাটি দূর হয়ে যাবে।
এছাড়াও ফজরের সঠিক সময়ে ওঠার জন্য আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া। আপনি যদি খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে আপনার ফজরের সময় উঠতে খুব একটা কষ্ট হবে না। বিজ্ঞানীর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে রাত ১০ঃ৩০-৩ঃ০০ যে সময় তা হল ঘুমানোর উপযুক্ত সময়। তাই আপনাকে ফজরের সঠিক সময় উঠতে হলে অবশ্যই রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে।
আরো প্ররুন ঃ মানব জিবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী আপনি যদি এশার নামাজের পূর্বেই খাওয়া দাওয়া করে নেন তাহলে আপনার যে উপকারটি হবে সেটি হল এশার নামাজের পর আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার জন্য আর সময় বয় করতে হবে না। তাতে করে আপনি যে উপকারটি পাবেন এটি হলো রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারবেন।
ফজরের নামাজ সময় মত পড়তে না পারলে করণীয় কি
আপনি যদি কোনভাবে ফজরের নামাজ জামাতে পড়তে ব্যর্থ হন তাহলে আপনি একাকি নামাজ আদায় করে নেবেন। এতে করে আপনার সালাত আদায় হয়ে যাবে। এরপরও যদি আপনি অতিরিক্ত দেরি করে ফেলেন সে ক্ষেত্রে সূর্য উঠার পর আপনার নামাজ পড়া খুব একটা কার্যকর হবেনা। সেক্ষেত্রে আপনি পরেরবার আপনার ছুটে যাওয়া সালাত আদায় করে নেবেন।
ফজরের নামাজ আদায় করলে যেসব উপকার হয়
আপনি একজন মুসল্লী হিসাবে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে পারলে পুরো দিনটি
আপনার সুন্দর এবং সুন্দরময় হয়ে উঠবে। এতে করে আপনার সারাদিন বিভিন্ন কাজকর্ম
এবং যেকোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনি বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠবেন। আপনার কাছে
প্রত্যেকটি কাজ সহজ হয়ে দাঁড়াবে হোক সেটা যতই কঠিন।
তাছাড়া ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য আপনি যদি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেন তাহলে
আরেকটি উপকার হবে সেটি হল সকালের ঠান্ডা আবহাওয়া আপনি গ্রহণ করতে পারবেন।
যা দিনের অন্যান্য সময়ের চাইতে সকালের বাতাসটা অধিক আরামদায়ক এতে করে আপনার মন
এবং শরীর দুটোই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে।
ফজরের সালাত আদায় না করতে পারলে সারাদিন যা হয়
আপনি যদি নিয়মিত ফজরের সালাত জামাতে আদায় করতে না পারেন তাহলে আপনার জীবনে
শান্তি নামক শব্দটা অধিকাংশে হারিয়ে যাবে কেননা সকালে ঘুম থেকে উঠার মাধ্যমে
আপনি যে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা অনুভব করবেন তা দিনের অন্যান্য
অবস্থাতেই করা সম্ভব নয়। এতে করে আপনার শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে
।
তাছাড়া আপনি যদি বেলা হয়ে ঘুম থেকে ওঠেন তাহলে আপনার মেজাজ খিট মিটে হবে এটাই
স্বাভাবিক। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনি অধিক সময় নিয়েও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করতে পারবেন না। তাই জীবনে সুস্থ থাকতে হলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করার
মাধ্যমে আপনার জীবন সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার ফজিলত অনেক। আপনি একজন মুসলিম হিসাবে ফজরের নামাজ
জামাতে পড়া আপনার দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাছাড়া আপনি যদি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত
সালাত জামাতের সহিত আদায় করতে পারেন তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা এবং রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)আপনার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তাছাড়া আপনার জীবনকে সুন্দর ও
সুশৃংখলভাবে পরিচালনা করার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা আপনার একান্ত
প্রয়োজন।
নামাজ মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃংখল করে গড়ে তুলে। তাছাড়া আপনি একজন
মুসলিম হিসাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া আপনার ওপর ফরজ। আজকের এই পোস্টে ফজরের
নামাজ জামাতে পড়ার ফজিলত এবং উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে যে সকল বিষয়গুলো বলা
হয়েছে সেইসব বিষয়গুলো আপনি নিজে পালন করবেন এবং আপনার পরিবারকে
পালনে অনুপ্রাণিত করবেন। এতে করে আপনি এবং আপনার পরিবার সুখময় হয়ে উঠবে।
আজকে এই পর্যন্তই এরকম পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং আজকের এই
পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।
গুড লাইক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url