পানি পান করার সঠিক সময় এবং ৫টি নিয়ম

পানি পান করার সঠিক সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমরা প্রতিনিয়ত পানি পান করে থাকি কিন্তু এই পানি কখন এবং কি পরিমান খাওয়া জরুরী সে সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। 

পানি-পান-করার-সঠিক-সময়-এবং-৫টি -নিয়ম

পানি ছাড়া আমাদের জীবন অচল। কিন্তু এই পানি আবার বিভিন্ন নিয়ম এবং সঠিক সময়ে খেতে না পারলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই আজকে পানি পান করার সঠিক সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ  পানি পান করার সঠিক সময় এবং ৫টি  নিয়ম

পানি পান করার সঠিক সময় 

পানি পান করার সঠিক সময় নিয়ে আমরা বিভিন্ন মতভাব প্রকাশ করে থাকি। বিষয়টি আপনার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও জীবন রক্ষা তে পানি পান করা খুবই জরুরী। এখন এই পানি পান করার বিভিন্ন নিয়ম ও সঠিক সময় সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা খুবই জরুরী। আমরা প্রতিনিয়ত পানি পান করে থাকি এবং দিনের কোন সময় এবং কখন পানি খেলে আমাদের দেহের জন্য ভালো সে সম্পর্কে আমরা অব্যাহত না।

ওপরের কথাগুলো থেকে আপনি বলতে পারেন পানি পান করার আবার এত নিয়ম আছে। হ্যাঁ অবশ্যই আছে। জীবনের প্রত্যেকটি জিনিস একটি নিয়ম তান্ত্রিক অনুযায়ী করা উচিত। আর এর বাইরে আপনি যদি অতিরিক্ত কিছু করে থাকেন তাহলে আপনার জীবনে পরিচালনায় বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন দেখা দেবে। শুধুই পানি না আপনার শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে আপনি যাই খান না কেন তা নিয়ম মাফিক খাওয়া উচিত। 

অতিরিক্ত সকল কিছুই আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। হোক সেটা খাদ্য কিংবা লাইফ স্টাইল। তাই আমাদের উচিত সঠিক নিয়ম মেনে আমাদের জীবনকে পরিচালনা করা। আজকের এ পোস্টে আমরা পানি পান করার সঠিক সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে  পড়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

পানি পান করা প্রয়োজন কেন 

আমাদের দেহকে সুস্থ ও সবল রাখতে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন ঠিক তেমনি ভাবেই পানির প্রয়োজন রয়েছে। পানি আমাদের দেহে খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করে থাকে পাশাপাশি শরীরকে সচেত রাখতে সাহায্য করে। আমরা প্রতিনিয়ত যে সকল খাবারগুলো গ্রহণ করে থাকি তার মধ্যে অধিকাংশ খাদ্যই এই পানির মাধ্যমে আমাদের দেহে মিশে যায়। পানি একমাত্র খাবার যা আমাদের হজম শক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে আমাদের দেহের প্রত্যেকটি অংশের প্রায় ৬০  থেকে ৭০  ভাগ পানি দ্বারা গঠিত। পানি দেহকে সচেত রাখতে সাহায্য করে তাছাড়া হজম শক্তি বৃদ্ধি ঘটায়। এই পানি পান করা আবার ব্যক্তি ভেদে বিভিন্ন প্রকার ভাগ করা যায়। যেমন যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে এবং যারা অল্প পরিশ্রম করে এই দুই শ্রেণীর লোকের পানির পানের পার্থক্য রয়েছে।

জীবনের জন্য পানি 

আমরা সকলেই জানি পানির আরেক নাম হচ্ছে জীবন। এই পানি আমাদের জীবনে কিরূপ প্রভাব ফেলে তা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে আপনি সুস্থ থাকার জন্য এবং শরীরে শক্তি আনার জন্য প্রতিনিধই খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন। আর এই খাদ্যকে হজম বা সাপোর্ট দেওয়ার জন্য পানির প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি আপনি বাস্তব জীবনে নিজেই অনুভব করে থাকতে পারেন।

আপনি যখন কোন খাবার গ্রহণ করে থাকেন তাৎক্ষণিক কিংবা একটু পরে আপনার পানি খাওয়ার প্রয়োজন হয়। আপনি যদি তাৎক্ষণিক পানি না খান তাহলে আপনার সেই খাদ্য পরিপাকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে আপনি সহজে বুঝতে পারেন যে জীবন রক্ষার জন্য পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার জন্য জীবনকে সুস্থ এবং সচল রাখতে পানি পানের বিকল্প নাই।

শরীর মন সচেত রাখতে কি পরিমান পানি পান করা উচিত 

এখন প্রশ্ন আসে একজন ব্যক্তিকে সুস্থ এবং সচেত থাকতে কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন? উত্তরটা মূলত আপনার শরীরের ওজন কতটুকু সে বিষয়টির  ওপর নির্ভর করে। আপনার দেহের ওজনের ওপর ভিত্তি করে পানি পান করা উচিত। তারপরও বলা যায় একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে দিনে ২-৩ লিটার পানি অপরিহার্য।

শরীর-মন-সচেত-রাখতে-কি-পরিমান-পানি-পান-করা-উচিত

এছাড়াও আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় সেটি হল আপনি দিনে কতটুকু পরিশ্রম করছেন তার ওপর। দিনের অধিকাংশ সময় আপনি যদি অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন যার কারণে আপনার দেহ থেকে অধিক ঘাম নিষ্কৃত হয়ে পানি বেরিয়ে আসে সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত পানি পান করতেই হবে।

দিনের কোন অংশে পানি পান করা উচিত 

এখন আপনি যদি বলেন দিনের কোন অংশে পানি পান করা উচিত। তাহলে বলা যায় দিনের অগ্রভাগেই বেশি পানি পান করা উচিত। কেননা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত একটু বেশি পরিশ্রম করে যার কারণে শরীর থেকে অধিক ঘাম নিঃসৃত হয়ে পানি বাইরে চলে আসে। তাই বলা যায় যে দিনের অগ্রভাগে পানি পান করা উপযুক্ত সময়। 

এখন এই পানি পান করার বিষয়টি আপনি যদি ভুলে যান সে ক্ষেত্রে কি করা যায়। আসলেই আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি জিনিস একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে রাখা খুবই জরুরী। তাই নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিয়ম মোতাবেক সকল কাজ করতে সক্ষম হন তাহলে আপনার জীবন লক্ষ্যে পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগবে না। 

আপনি যদি সময়ের সঠিক ব্যবহার করে থাকেন তাহলে প্রত্যেকটা লক্ষ্যই আপনার কাছে খুব সহজ মনে হবে। সকাল থেকে শুরু করে দিনের প্রত্যেকটি অংশকে আপনি যদি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন তাহলে এই পানি পান করার বিষয়টি আপনার কাছে খুব সহজ মনে হবে। 

তাছাড়া আপনি সঠিক সময়ে পানি পান করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। তার মধ্যে একটি অন্যতম মাধ্যম হলো আপনি যেখানেই অবস্থান করেন না কেন আপনার কাছে একটি পানির বোতল সঙ্গে রাখা। এতে করে যে উপকারটি হবে সেই পানির বোতল আপনাকে পানি পানে উৎসাহ করবে। তা থেকে আপনি সময় মতো পানি পান করতে সক্ষম হবেন।

খালি পেটে পানি পান করার গুরুত্ব

আপনি হয়তো খালি পেটে পানি পান করার গুরুত্ব জেনে থাকতে পারেন। আবার অনেকেই এ সম্বন্ধে কোন ধারণায় নেই। খালি পেটে পানি পান করারও আবার কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয় আছে। আপনি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে পানি পান করবেন এটি কি খালি পেটে পানি পান করার নিয়ম? উত্তরে বলা যায় এটি সঠিক নিয়ম না। তাহলে এখন প্রশ্ন কখন পানি পান করা যায়। 

খালি-পেটে-পানি-পান-করার-গুরুত্ব

আপনি সকালে যখনই ঘুম থেকে উঠুন না কেন সবার প্রথমে এক গ্লাস পানি কিংবা পরিমাণ মতো পানি পান করবেন। এটি হল সকালে খালি পেটে পানি পান করার নিয়ম। এতে করে যে উপকারটি হয় সারা রাত ঘুমানোর পর আপনার মুখের ভিতরে যে লালা নিষ্কৃত হয় সেই লালাটা পানি পান করার মাধ্যমে দেহের ভিতর চলে যায় এতে করে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর আশঙ্কা কমে যায়। 

রাতে কি পরিমান পানি পান করা উচিত 

আমরা প্রথমেই আলোচনা করেছি যে দিনের অগ্রভাগের শুরুতেই বেশি পানি পান করা ভালো। তাছাড়া দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পূর্বে এবং খাওয়া-দাওয়া শেষে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর পানি পান করার  সঠিক নিয়ম। খাওয়া-দাওয়া চলাকালীন খুব প্রয়োজনে অল্প পরিমাণ পানি পান করা যায়। 

বৈজ্ঞানিক এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে আমরা যখন খাবার গ্রহণ করি তখন সেই খাবারটা প্রথমত আমাদের পরিপাকতন্ত্রে  জমা হয়। এরপর খাবারের প্রকার ভেদে পাকস্থলীতে বিভিন্ন ভাগ সৃষ্টি হয়। পাকস্থলীতে যে সকল খাবার ভারী মনে করে সেই সব খাবার রেচন তন্ত্রের মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে  সরিয়ে ফেলে।

এবং খাবার শেষের ৩০ মিনিট পর পানি পান করলে সেসব খাবার আবার জেগে উঠে এবং খাবারে থাকা প্রয়োজনীয় উপাদান পানির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর ১  ঘন্টা পূর্বে আপনি যদি একটি নিয়ম অনুযায়ী পানি পান করে ঘুমাতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পানির সংস্পষ্টে সক্রিয় থাকবে। 

শীতকালে যে পরিমাণ পানি খাবেন 

অনেকেই আছে যারা শীতকালে পানি পান কম করে। এটির অন্যতম একটি কারণ হলো শীতকালে আমাদের পিপাসা একটু কমই লাগে। যার কারণে আমরা অতিরিক্ত পানি পান করার প্রয়োজন বোধ মনে করি না। কিন্তু শীতকাল বলে কি আপনি পানি পান কমিয়ে দিবেন বিষয়টি কিন্তু সেরকম না। আপনাকে প্রতিনিয়ত কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতেই হবে। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত প্রস্রাব করার মাধ্যমে এক থেকে দেড় লিটার পানি দেহ থেকে বের করে দেই। তাছাড়া আপনি যদি একটু কঠোর পরিশ্রমী হন তাহলে দেখবেন বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে আপনার শরীর থেকে ঘাম নিঃসৃত হওয়ার মাধ্যমে পানি বেরিয়ে আসে। এসব ঘাটতি পূরণ করার জন্য শীতকালেও আপনাকে ২ - ২.৫ লিটার পানি নিয়মিত পান করতে হবে। 

তাছাড়া আপনার অতিরিক্ত পানি পান করার কারণে যদি ঘন ঘন প্রস্রাব হয় সেই ক্ষেত্রে  রাতে ঘুম থেকে উঠা আপনার জন্য কষ্টকর মনে হলে সেই ক্ষেত্রে আপনি পানি পান করা একটু কমিয়ে দিতে পারেন। অন্যথায় কোন সমস্যা না থাকলে আপনি নিয়মিত পানি পান করবেন এতে করে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। 

শীতকালে প্রথমত যে সমস্যাগুলো হয় এগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম হলো পা ফাটা , ত্বকের উপর ছাপ পড়া ইত্যাদি। আর এইসব সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত পানি পান করা উচিত। এখন আপনি নিশ্চয়ই অনুভব করতে পেরেছেন শীতকালে আপনার কি পরিমান পানি পান করা প্রয়োজন। 

পানি পান করার ৫টি নিয়ম 

এখন পানি পান করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মব্যস্ততার কারণে যে যেভাবে পারি সেভাবেই পানি পান করে থাকি। কিন্তু এই পানি পান এর কয়েকটি সঠিক নিয়ম আছে। এসব নিয়ম নিচে তুলে ধরা হলো 

  • সর্বদাই বসে পানি পান করা 
  • এক গ্লাস পানি একবারেই না খাওয়া দম ছেড়ে ছেড়ে খাওয়া 
  • খাওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পূর্বে পরিমিত পানি পান করা এবং 
  • খাবার শেষে কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা 
  • বড় পাত্র থেকে পানি পান না করা এবং গ্লাসে পানি পান করা 

উপরোক্ত বিষয়গুলো পানি পান  এর সঠিক নিয়ম বলে বিবেচিত। যা প্রত্যেকের অবলম্বন করা উচিত।

আমাদের শেষ কথা 

পানি আমাদের দেহের অমূল্য সম্পদ। তাইতো পানির আরেক নাম হলো জীবন। আর এই জীবনকে সুন্দর ও সচেত রাখতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই প্রয়োজনীয় খাদ্যটি আমরা বিভিন্নভাবে গ্রহণ করে থাকি। তাই আমরা সকলেই চেষ্টা করব যে পানি পান করার সঠিক নিয়ম গুলো মেনে পানি পান করার। এতে করে আমাদের শরীর এবং মন উভয় সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে।

পানি পান করার সঠিক সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই পোস্টটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে। আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনি যদি একটুও উপকৃত হন তাহলে এই পোস্টটি আপনার অন্যান্য বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন আর নিয়মিত এ সকল তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন । আজ এ পর্যন্তই ধন্যবাদ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গুড লাইক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url